জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে বিএনপির ভেতরে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন স্পষ্টভাবে চোখে পড়ছে। দলটি কঠিন সময়েও স্থিতিশীলতার পক্ষে অবস্থান ধরে রেখেছে। তবু অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে—বিএনপি অনেক বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিচ্ছে না কেন? হয়তো এটি ইচ্ছাকৃত কৌশল। কারণ, যখন দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতার বাতাবরণ থাকে, তখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক শক্তি যদি পাল্টা অস্থিরতা তৈরি করে, স্থিরতা রক্ষা করবে কে?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন বড় পরিবর্তন এসেছে। রাজনীতি কেবল মাঠে নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও বিস্তৃত। বিএনপিকে তাই দুই মঞ্চে—মাঠের রাজনীতি ও বুদ্ধিভিত্তিক রাজনীতিতে—ভারসাম্য রক্ষা করতে হচ্ছে। এ কাজ সহজ নয়। ১৭ বছর ধরে প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করা তৃণমূলের কর্মীরা এখন সুসময়ে দলীয় প্রাপ্তি নিজেদের হাতে ফিরে পেতে চায়। এই বাস্তবতায় ভারসাম্য বজায় রাখা নেতৃত্বের জন্য নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং।
সাম্প্রতিক সিলেটের ঘটনা তার একটি উদাহরণ। ইলিয়াস আলীর পত্নী তাহসিনা লুনা এবং লন্ডনভিত্তিক দলের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির—দুজনকে ঘিরে কিছু সমালোচনা উঠেছিল। কিন্তু বিএনপি এখানে যেভাবে ব্যালান্স করেছে, সেটি পরিণত নেতৃত্বের পরিচয়। লুনাকে মনোনয়ন দিয়ে তৃণমূলকে সম্মান জানানো হয়েছে, আর হুমায়ুন কবিরকে দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পদে যুক্ত করা হয়েছে—যা তার দক্ষতার ক্ষেত্রের সঙ্গেই সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি নিঃসন্দেহে বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত।
একইভাবে, ঢাকা-১৪ আসনে মায়ের ডাক সংগঠনের নেত্রী সানজিদা ইসলাম তুলিকে মনোনয়ন দেওয়াও মানবিক ও নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। গুমের শিকার পরিবারগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা ও সংহতির প্রতীক এই সিদ্ধান্ত। তুলি নিজে গুমের শিকার সুমন সাহেবের বোন; তার বাস্তব অভিজ্ঞতা গুমবিরোধী আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দেবে। বিএনপি চাইলে অনেক আগেই এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারত, কিন্তু তারা অপেক্ষা করেছে উপযুক্ত সময়ের জন্য—যা দলের পরিণত রাজনীতির প্রমাণ।
এসব সিদ্ধান্ত থেকে স্পষ্ট, বিএনপি এখন ৪৫ বছরের পরিণত এক রাজনৈতিক সংগঠন। পরিণতি মানে সবাইকে খুশি করা নয়; বরং দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে কোথায় ঝুঁকি নিতে হবে, কোথায় সংযম দেখাতে হবে—সেটি সঠিকভাবে বোঝা। বিএনপি এখন সেই রাজনৈতিক পরিপক্বতায় পৌঁছেছে বলেই মনে হয়।
লেখক: কবিরুল ইসলাম কবির
(সাংবাদিক)