মোবারক আলী, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:
“আমার সন্তানদের দেখে রেখো। আমি সত্যিই তোমাকে অনেক ভালোবাসতাম। আমি অপরাধী বটে, কিন্তু তুমি যেভাবে অপবাদ দিয়েছ—আমি নাকি চরিত্রহীন! আল্লাহর কসম, বিশ্বাস করো—আমি তোমাকে ছাড়া আর কোনো নারীকে স্পর্শ করিনি”—নিজ হাতে লেখা এমন হৃদয়বিদারক একটি সুইসাইড নোট রেখে স্ত্রী’র সাথে অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে জীবন দিলেন তরিকুল ইসলাম (৩৫) নামের এক যুবক।
ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যার দিকে ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল পৌরশহরের শান্তিপুর এলাকায়। জাকের পাটির ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্রফ্রন্টের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী বেলায়েত হোসেন লিটনের বোনের বাড়ির একটি ভাড়া বাসা থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার দত্তবাড়ি এলাকার দুলাল হোসেনের ছেলে তরিকুল পেশায় একটি ওষুধ কোম্পানি ড্রাগ ইন্টারন্যাশনালে চাকরি করতেন। চাকরির সুবাদে তিনি স্ত্রীসহ রাণীশংকৈলের শান্তিপুর এলাকায় দীর্ঘদিন বসবাস করছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক কলহ, সন্দেহ ও মানসিক অশান্তি চলে আসছিল বলে প্রতিবেশীরা জানান।
সন্ধ্যায় বাড়ির অন্যরা ব্যস্ত থাকার সময় তরিকুল চুপিসারে ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। কিছুক্ষণ পর কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে সন্দেহ হলে প্রতিবেশীরা গিয়ে দরজা ভেঙে তার ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান এবং দ্রুত পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ ঘটনাস্থল ঘুরে সুইসাইড নোটটি জব্দ করে এবং মরদেহ সুরতহাল সম্পন্ন করে ময়নাতদন্তের জন্য ঠাকুরগাঁও মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এসময় কান্না জড়িত কণ্ঠে তরিকুলের স্ত্রী আশা বেগম বলেন,
“এটা সে কী করলো! ঝগড়া আগেও হয়েছে, এমনও হয়েছে তাকে জুতো দিয়ে পিটিয়েছি… কিন্তু কখনো এমন করেনি। আজকে তো শুধু কথার ঝগড়া ছিল, এজন্য সে এমন করতে পারলো!”—এ কথা বলেই তিনি অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
পুলিশের ভাষ্য, এই আত্মহত্যার সঙ্গে পারিবারিক বিরোধ ও মানসিক চাপের বিষয়টি স্পষ্টভাবে জড়িত থাকতে পারে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
এ প্রসঙ্গে রাণীশংকৈল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আরশেদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন,
“মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানোর হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসদে পরবর্তী প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।”
স্থানীয় এলাকাজুড়ে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেমে এসেছে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে পরিবারে পারস্পরিক আস্থার সংকট ও মানসিক নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন।