মোবারক আলী, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) থেকে:
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় গত তিন দিনের টানা মাঝারি ও হালকা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় ব্যাপক কৃষি ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কৃষি অফিসের প্রাথমিক হিসেবে আমন ধানের প্রায় ১৩০ হেক্টর এবং ২০ হেক্টর আলুর ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও মধ্য-নিচু জমিতে পানি জমে ধানের শীষ ঝরে পড়া ও গাছ নুইয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
এতে সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন আমন ধানচাষিরা। বৃষ্টির প্রভাবে অনেক স্থানে পাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে, বেশ কিছু ধান ঝরে জমিতে পড়ে নষ্ট হয়েছে। মাঠে কাটা ধান ফেলে রাখা কৃষকেরা সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে পড়েছেন—বৃষ্টির পানিতে সেসব ধান ভিজে গেছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় মোট ২১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৫১ হাজার কৃষক আমন ধানের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে উন্নত জাত ব্রি-ধান–৭৫, ৮৭, ৯৩, ১০০, ১০৩, বীণা-১৭, সাদা স্বর্ণা, গুটি স্বর্ণা, সুমন স্বর্ণা উল্লেখযোগ্য। হঠাৎ এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরাসরি ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে বলে কর্মকর্তারা জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জমে থাকা পানি দ্রুত নিষ্কাশন, রোগবালাই প্রতিরোধ ও সঠিক পরিচর্যা করলে নুইয়ে পড়া ধানগাছও পুনরায় দাঁড়িয়ে ফলন দিতে পারে। এজন্য প্রয়োজন দ্রুত সমন্বিত স্থানীয় উদ্যোগ এবং কৃষকদের সচেতনতা।
উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে ঘুরে দেখা গেছে ধানচাষিদের উৎকণ্ঠা—অন্যদিকে হতাশার ছাপ স্পষ্ট।
লেহেম্বা ইউনিয়নের কৃষক শামীনুর রশিদ বলেন,
“আমি ৫ একর ধান কেটে মাঠে শুকানোর জন্য ফেলেছিলাম। গত তিন দিনের বৃষ্টিতে সব ভিজে গেছে, কিছু ধান তো গজিয়ে উঠছে। এখন কী করবো বুঝতে পারছি না।”
নন্দুয়ার ইউনিয়নের কৃষক শিল্পী বলেন,
“সকালে জমিতে গিয়ে দেখি সব ধানগাছ মাটিতে শুয়ে গেছে। ফলন আর আশানুরূপ হবে না। খরচ উঠলেই বাঁচতাম।”
বাচোর ইউনিয়নের কৃষক ফিরোজ, সাইফুল ও অভিষেক, নন্দুয়ার ইউনিয়নের জামাল ও বাদশাসহ অনেকেই বলেন,
“গাছ সোজা না হলে ফলন কমে যাবে, এতে বড় ক্ষতির আশঙ্কা।”
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সহীদুল ইসলাম বলেন,
“প্রাকৃতিক দুর্যোগে ধানের ক্ষতি হওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন। বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর থেকেই মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে—পর্যাযক্রমে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হবে।”
ক্ষতির মাত্রা আরও বাড়লে অনেক কৃষক ঋণ–দায় ও বীজ–সংকটে পড়তে পারেন বলে স্থানীয় কৃষি পরিবার আশঙ্কা করছে।