
নিজস্ব প্রতিবেদক:
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে শুরু হয়েছে ব্যাপক নির্বাচনী তৎপরতা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের শোডাউন, সভা সমাবেশ, ব্যানার-ফেস্টুনে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা। ঐতিহ্যগতভাবে আওয়ামী লীগের দূর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনে এবারও বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে ভোটযুদ্ধের আভাস স্পষ্ট।
ঠাকুরগাঁও-২ আসনের কাঠামো
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন, হরিপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও রাণীশংকৈল উপজেলার ২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ঠাকুরগাঁও-২ আসনটি দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
অতীত নির্বাচনী ইতিহাস
১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসেবে দবিরুল ইসলাম নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির জেড মর্তুজা চৌধুরী তুলা জয়ী হলেও, একই বছরের জুনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ফের জয় পান দবিরুল ইসলাম।
এরপর ২০০১ ও ২০০৮ সালেও তিনি নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তাঁর বড় ছেলে মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপি হন।
বিএনপিতে আলোচনায় মির্জা পরিবার
এ আসনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পিতা মরহুম মির্জা রুহুল আমিন (চোখা মিয়া) ১৯৮৮ সালে এমপি ছিলেন। সেই সূত্রে মির্জা পরিবারের প্রভাব আজও প্রবল।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, “ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মির্জা পরিবার থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হলে বিজয় নিশ্চিত সহজ হত। তবে এবার ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী যেই হোক জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি রয়েছে বলে সাধারণ ভোটাররা জানিয়েছে।
দলীয় প্রার্থী হিসেবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা কলেজের সাবেক ভিপি জেড মর্তুজা চৌধুরী তুলা।
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে জুলুমের অবসান ঘটেছে। এখন দেশ ও সমাজ গড়তে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমার এলাকায় মানুষ দীর্ঘদিন নির্যাতনের শিকার ছিল, তারা এখন পরিবর্তন দেখতে চায়।”বিএনপি যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে অতীতের মত এই আসনটি পুনরুদ্ধার করবো ইনশাআল্লাহ। আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এই অবহেলিত এলাকার শিক্ষা, অবকাঠামো ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশেষভাবেব কাজ করবো।
আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী ড্যাবের সাবেক মহাসচিব ও সুনামধন্য চিকিৎসক ডা. আব্দুস সালামও মাঠে বেশ সক্রিয়। তিনি বলেন, “দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ইনশাআল্লাহ ঠাকুরগাঁও-২ আসনটি আমরা পুনরুদ্ধার করতে পারব।”
জামায়াত ও গণ অধিকার পরিষদের প্রস্তুতি
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও জেলার সাবেক আমির মাওলানা আব্দুল হাকিমও নির্বাচন প্রস্তুতিতে রয়েছেন। তিনি দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার পাশাপাশি এলাকায় জনপ্রিয় প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। তিনিও প্রতিনিয়ত ভোটারদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারের মন জয় করার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, গণ অধিকার পরিষদের প্রার্থী ফারুক হাসান বলেন,
> “আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে আমাদের স্বপ্নের নির্বাচন। সীমান্তবর্তী এই এলাকার মানুষ উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত। আমি নির্বাচিত হলে শিক্ষা, অবকাঠামো ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশেষভাবে কাজ করব।”
নির্বাচনী উত্তাপ বাড়ছে
নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বাড়ছে রাজনৈতিক তৎপরতা ও কৌশলগত প্রস্তুতি। বিএনপির পুনরুদ্ধারের চেষ্টা, জামায়াত ও গণ অধিকার পরিষদের উপস্থিতি — সব মিলিয়ে এ আসনটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।