প্রিন্ট এর তারিখঃ Nov 19, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Oct 18, 2025 ইং
ঠাকুরগাঁওয়ের বুঁড়িবাধে মাছ ধরার মহাউৎসব

মো: শামসুজ্জুহা, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি:
হাতে জাল, সারি ব দ্ধ হয়ে পানিতে ফেলছেন শত শত মানুষ, কেউ ভেলায়, কেউ ছোট নৌকায় করে চলছে মাছ ধরার এক প্রতিযোগিতা। প্রতি বছরের ন্যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সুক নদীর বুড়ি বাঁধে মাছ ধরা উৎসব শুরু হয়েছে। এ উৎসবকে ঘিরে বাঁধে মাছ ধরতে ছুটে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
শনিবার সকাল থেকে মাছ নিয়ে ডাঙ্গায় ফিরে আসেন তারা। এ উপলক্ষ্যে হাজার হাজার মানুষ আসেন মাছ শিকার করতে। অনেকে আসেন মাছ কিনতে। আশপাশে শুরু হয় মানুষের মিলন মেলার।
তবে এইবার চাহিদা অনুযায়ী মাছ না পাওয়াই অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষায় কাজ রিং জাল নিধনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন প্রশাসন।
শুক্রবার বিকেলে বাঁধের পানি ছেড়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। গভীর রাত থেকে মাছ শিকারিরা পানিতে নামেন মাছ ধরার জন্য।
ঠাকুরগাঁও সদরের আকচা ও চিলারং ইউনিয়নে বুড়ি বাঁধের অবস্থান। প্রতিবছর বাংলা পঞ্জিকার কার্তিক মাসের প্রথম দিকে খুলে দেওয়া হয় জলকপাট। বাঁধে আটকে থাকা পানিতে নেমে পড়েন এলাকার মানুষ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন আশপাশের শহর-গ্রামের লোকজন। এটা একসময় রূপ নেয় মাছ ধরার উৎসবে। এটা চলে তিন-চার দিন। মাছ ধরা এই উৎসব ঘিরে এলাকা পরিণত হয় মিলন মেলায়।
শুক্রবার বিকেলে বাঁেধর পানি ছেড়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করলে মাছ শিকারীরা জাল নিয়ে পানিতে নামে মাছ ধরা শুরু করেন। বিশেষ করে দেশির মাছ পাওয়া বাঁধটিতে। টাকি, পুটি, মলা, ফলি, শিং, শোল, টেংরা মাছ বেশ ভালো দামে বিক্রি হয় বাঁধের সামনে।
ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, স্থানীয়দের পানির চাহিদা পূরনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২ হাজার ৩৮৮ হেক্টর জমির উপর বাধটি নির্মাণ করেন ১৯৫২ সালে। যা পরে ১৯৭৮ সালে সংস্কার করা হয় চাষিদের সুবিধা দিতে। চলতি বছর বাঁধটির মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার হেক্টর উচু জমির আমন ধানে সেচের চাহিদা পূরণ করেন ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পীরগঞ্জ উপজেলার লোহাগাড়ার দর্শনার্থী আব্দুল হক বলেন, হাজার হাজার মাছ শিকারিসহ দর্শনার্থীরা ছুটে আসে বাঁধ এলাকায়। মাছ ধরার দৃশ্য দেখে খুব ভালো লাগছে। মাছ নিয়েছি একটু বেশি দাম তবে এখানকার অনেক স্বুসাদু তবে ব্যবসায়ি বাহির থেকে মাছ এনে বিক্রি করছেন।
বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ায় জলকপাটে মাছ উৎসব শুরু হয়। হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। অনেকেই মাছ সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
সদরের রহিমানপুর এলাকার মাছ শিকারি করিমুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়রা রিং জাল ব্যবহার করে অন্যদের মাছ ধরতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। জাল দিয়ে আগেই বাঁধের মাছ ধরা হয়েছে। প্রশাসন এবার রিং বন্ধ করার চেষ্টা করেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিনি।
স্থানীয় রমজান আলী বলেন, মাছ যাই পাওয়া যাক না কেন আনন্দটা সবচেয়ে বেশি। হাজার হাজার মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়। আমরা প্রতিবছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলঅম বলেন, বুড়ির বাধে দেশী প্রজাতির মাছ রক্ষায় কাজ করছি। সেই সাথে আগামীতে মাছ যেন আরও বেশি পরিমাণে হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখছি। চলতি বছর একাধিক বার অভিযান পরিচালনা করে রিং জাল ধংস করা হয়েছে বুড়ির বাঁ থেকে। দিন দিন মানুষের বিনোদনের জায়গা কমে যাচ্ছে। তাই কেউ আসছেন মাছ শিকার করতে আবার অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে আসছেন বিনোদনের উদ্দেশ্যে। সর্বপরি বুড়ির বাঁধে মাছ উৎসবে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। শুধু ঠাকুরগাঁও নয় আশপাশের জেলা গুলো থেকেও অনেক মানুষ আসেন বুড়ি বাঁধের মাছ উৎসবে।
স্বত্ব © জাগরণ বিডি ২০২৫